আপনার শরীরই আপনার আসল ইনভেস্টমেন্ট। তাকে সময় দিন, খাবার দিন, যত্ন দিন।

কোন ভিটামিন খেলে শরীর বাড়ে? – বিজ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে

শরীরের গঠন ও ওজন বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যাঁরা অতিরিক্ত রুগ্নতা বা দুর্বলতার সমস্যায় ভোগেন। আমি নিজেও এক সময় খুবই রোগা ছিলাম, নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করলেও ওজন বাড়ছিল না। তখন থেকেই খোঁজ নিতে শুরু করলাম – শরীর বাড়ানোর জন্য আদৌ কোনো ভিটামিন ভূমিকা রাখে কি না?

কোন ভিটামিন খেলে ওজন বাড়ে?

কোন ভিটামিন খেলে ওজন বাড়ে?

ভিটামিন কি ওজন বাড়ায়?

সোজা কথায়, ভিটামিন সরাসরি ওজন বাড়ায় না। তবে কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিন শরীরের বিপাকক্রিয়া, হরমোন ব্যালান্স এবং পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে, যা পরোক্ষভাবে ওজন ও পেশি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আসুন জেনে নিই কোন ভিটামিনগুলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ:

১. ভিটামিন B-কমপ্লেক্স

উপকারিতা:

ভিটামিন B গ্রুপ (বিশেষ করে B1, B2, B3, B5, B6, B7, B9 ও B12) শরীরে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। এগুলো খাবার থেকে শক্তি বের করে শরীরের কোষে পৌঁছে দেয়, যা ওজন বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:

আমি যখন নিয়মিত B-কমপ্লেক্স সাপ্লিমেন্ট নিতে শুরু করি, তখনই লক্ষ করলাম ক্ষুধা বাড়ছে। আগের তুলনায় খাওয়ার রুচি ফিরে এসেছিল। এক মাসের মাথায় ওজন প্রায় ২ কেজি বেড়ে যায়।

 

২. ভিটামিন D

উপকারিতা:

ভিটামিন D হাড় মজবুত করে এবং পেশি গঠনে সহায়তা করে। এটি শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা পেশি বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র:
  • সূর্যের আলো
  • ডিমের কুসুম
  • চর্বিযুক্ত মাছ
নোট:

ভিটামিন D-এর অভাব হলে ক্লান্তি, পেশিতে দুর্বলতা এবং দুর্বল হাড়ের সমস্যা হতে পারে – যা শরীর বাড়াতে বাধা সৃষ্টি করে।

 

৩. ভিটামিন C

উপকারিতা:

ভিটামিন C রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। এটি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা পেশির গঠনে সহায়ক।

ব্যক্তিগত টিপস:

আমি সকালে এক গ্লাস লেবু পানি খেতাম। এটা শুধু হজমে সাহায্য করেনি, বরং সারাদিনের মধ্যে সতেজ থাকতাম এবং নিয়মিত খাওয়ার রুটিন বজায় রাখতে পারতাম।

 

৪. ভিটামিন E

উপকারিতা:

ভিটামিন E একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং শরীরের পুনর্গঠনে সহায়তা করে। এটি ত্বক ও পেশির উন্নতিতেও ভূমিকা রাখে।

 

কোন প্রাকৃতিক খাবার খেলে শরীর বাড়ে?

এখন প্রশ্ন – শুধু ভিটামিন খেলেই হবে না। শরীর বাড়াতে দরকার ঘরোয়া, সুলভ অথচ পুষ্টিকর খাবার। নিচে আমি এমন কিছু খাদ্যের তালিকা দিচ্ছি, যা আমি নিজে খেয়েছি এবং ফল পেয়েছি।

✅ ডিম
প্রতিটি ডিমে রয়েছে প্রায় ৬-৭ গ্রাম প্রোটিন, যা পেশি গঠনের জন্য অপরিহার্য।

✅ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধে থাকে প্রোটিন, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D, যা ওজন ও হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে।

✅ কলা
তরকারি বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে কলা খেলে দ্রুত ক্যালোরি যোগ হয়। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, ফাইবার ও ভিটামিন B6।

✅ বাদাম ও চিনা বাদাম
ফ্যাট, প্রোটিন এবং ক্যালোরির দারুণ উৎস। দিনে একমুঠো বাদাম শরীর বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।

✅ চাল ও আলু
উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত এই খাবারগুলো শরীরে ক্যালোরি সরবরাহ করে, যা ওজন বাড়াতে সহায়ক।

✅ ঘি ও নারকেল তেল
স্বল্প পরিমাণে কিন্তু নিয়মিত ঘি বা কোল্ড-প্রেসড নারকেল তেল ব্যবহার করলে ভালো ফ্যাট পাওয়া যায়, যা পেশি ও ওজন বাড়ায়।

✅ ডাল ও মুসুর
প্রোটিন ও আয়রনের ভালো উৎস, যা দুর্বলতা কাটাতে এবং পেশির পুনর্গঠনে সাহায্য করে।

 

৩. আমার অভিজ্ঞতা

আমি এক সময় দিনে ৩ বেলা খেতাম, কিন্তু সেটা ছিল ভাত আর তরকারিতে সীমাবদ্ধ। পরবর্তীতে যখন ডায়েটে কলা, দুধ, ডিম ও বাদাম যোগ করলাম এবং সকালে খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানি ও লেবুর রস খেতে শুরু করলাম, তখন হজম বাড়ল। ক্ষুধা বাড়ল। এক মাসেই শরীর একটু ভারী হতে শুরু করল।

শরীর বাড়াতে যা বুঝেছি:

✖ শুধু বেশি খাওয়া নয়
✔ সঠিক পুষ্টির ভারসাম্য দরকার
✔ প্রতিদিন সঠিক সময়ে খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকা জরুরি

 

৪. কিছু বাড়তি টিপস

  • প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান
  • পানির পরিমাণ ঠিক রাখুন (৩ লিটার পর্যন্ত)
  • ব্যায়াম করুন (free-hand বা হালকা resistance training)
  • অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে ডাক্তার/পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন

 

শরীর বাড়ানো কোনো ম্যাজিক নয়। এটা ধৈর্য, সঠিক জ্ঞান এবং পরিকল্পনার বিষয়। উপযুক্ত ভিটামিনের সঙ্গে প্রাকৃতিক খাবার খাওয়া শুরু করলে ধীরে ধীরে শরীরে পরিবর্তন আসবেই। আমি সেটা নিজে দেখেছি, এখন আপনিও পারেন।

আপনার শরীরই আপনার আসল ইনভেস্টমেন্ট। তাকে সময় দিন, খাবার দিন, যত্ন দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *