থানকুনি (Centella Asiatica) নানা ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর একটি ভেষজ উদ্ভিদ। আমাদের দেশে এটি অত্যন্ত পরিচিত এবং বিপুল ব্যবহৃত। এটি মূলত জলাভূমি বা ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মায়। থানকুনি পাতার নানা ঔষধি গুণ আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। তবে অতিরিক্ত বা ভুল উপায়ে ব্যবহারে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়।

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতা
১. হজমশক্তি বৃদ্ধি
থানকুনি পাতা হজম শক্তি বাড়ায় এবং অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়। এতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান পেটের গ্যাস ও বদহজম দূর করে।
২. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
থানকুনি পাতা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তোলে। তাই এটি ছোট থেকে বড় সকলের জন্য উপকারী।
৩. রক্ত পরিষ্কারক
থানকুনি পাতার রস রক্ত পরিষ্কার করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এটি ব্রণ ও ফুসকুড়ির সমস্যাও দূর করে।
৪. ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক
থানকুনি পাতার নির্যাস ত্বকের ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলে। এছাড়া এটি প্রদাহ কমাতে ও সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
৫. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
থানকুনি পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ফলে হার্ট ভালো থাকে। নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
৬. আর্থ্রাইটিস ও বাতের ব্যথা কমায়
থানকুনি পাতায় রয়েছে প্রদাহনাশক উপাদান, যা গাঁটের ব্যথা ও বাতজনিত সমস্যা নিরাময় করে।
থানকুনি পাতার অপকারিতা
১. অতিরিক্ত সেবনে লিভারের সমস্যা
অতিরিক্ত থানকুনি পাতা সেবন করলে লিভারের ওপর চাপ পড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে লিভারের ক্ষতি করে।
২. রক্তচাপ অতিরিক্ত কমিয়ে দেয়
থানকুনি পাতা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করলেও অতিরিক্ত গ্রহণ করলে রক্তচাপ অত্যন্ত কমে যায়। যার ফলে শারীরিক দুর্বলতা বাড়ে ও মাথা ঘুরে।
৩. অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা
থানকুনি পাতায় সেডেটিভ (ঘুম আনয়নকারী) উপাদান রয়েছে, যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।
৪. অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
গর্ভবতী নারীদের জন্য থানকুনি পাতা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটায় এবং গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ায়।
৫. এলার্জি সৃষ্টিকারী
অনেকের ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা সেবনে এলার্জি দেখা দেয়। এটি ত্বকে চুলকানি, লালচে দাগ বা ফোলাভাব সৃষ্টি করে। এধরণের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
থানকুনি পাতা প্রকৃতির এক অসাধারণ উপহার, যা নানা রোগ প্রতিরোধ করে। তবে এটি গ্রহণের সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং মাত্রা অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।